কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবেও পরিচিত। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যের মধ্যে আছে 'অগ্নি-বীণা', 'বিষের বাঁশী', 'ভাঙার গান', 'সাম্যবাদী', 'দোলনচাঁপা' ইত্যাদি। তাঁর লেখা উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের মধ্যে আছে 'বাঁধন-হারা', 'মৃত্যুক্ষুধা', 'শিউলিমালা' ইত্যাদি। তাঁর লেখা প্রবন্ধের বই 'যুগবাণী', 'দুর্দিনের যাত্রী', 'রুদ্রমঙ্গল' ইত্যাদি।
নিচের কবিতাটি কবির 'সর্বহারা' কাব্য থেকে নেওয়া হয়েছে। কবিতাটি গদ্যে রূপান্তর করো। গদ্যে রূপান্তরের সময়ে কবিতায় ব্যবহৃত শব্দের বদলে যত বেশি সম্ভব প্রতিশব্দ বসানোর চেষ্টা করো। শব্দের অর্থ বোঝার জন্য এবং প্রতিশব্দ খোঁজার জন্য প্রয়োজনে অভিধানের সহায়তা নাও।
কাজী নজরুল ইসলাম
১
দুর্গম গিরি কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হাঁশিয়ার।
দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মত?
কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।
এ তুফান ভারি, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরি পার।
২
তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান।
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
ফেনাইয়া ওঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে, নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার
৩
অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ, কান্ডারি!
আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তিপণ। "হিন্দু না ওরা মুসলিম?"
ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? কান্ডারি! বলো ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা-রা
৪
গিরি-সংকট, ভীরু যাত্রীরা, গুরু গরজায় বাজ,
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ। কান্ডারি!
তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াহু যে মহাভার।
৫
কান্ডারি! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
বাঙালির খুনে লাল হলো যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর
উদিবে সে রবি আমাদেরই খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।
৬
ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান,
আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান?
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ?
দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, কান্ডারি হাঁশয়ার!
আরও দেখুন...